বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) | | NCTB BOOK

পূর্ববর্তী শ্রেণিসমূহে আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সম্বন্ধে জেনেছি। এসডিজির মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের সকল দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন ও ভারসাম্য আনয়ন। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো একটি সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টেকসই উন্নয়নের ১৭টি অভীষ্ট, ১৬৯ টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩০টি নির্ধারক স্থির করেছে। মূলত ২০১৬ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো তাদের নিজ নিজ দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আলোকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশও এ কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে নেই। খুব গুরুত্বের সাথেই বাংলাদেশ এ অংশীদারিত্বের দায়িত্ব নিয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এনভিজি

আমাদের দেশ ইতোমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এমডিজি অর্জনে সক্ষমতা দেখিয়ে বাংলাদেশ নিম্ন- মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে এসডিজি অর্জন করতে হবে। কোনো অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনই হলো উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়ন হলো একটি সামগ্রিক ধারণা, যেখানে মানুষের চাহিদা পুরণ করতে প্রাকৃতিক সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হবে, তবে নিঃশেষ হয়ে যাবে না বা ক্ষতি হবে না। উন্নয়নের ফলাফল বিবেচনা করে ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনের জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্ষুধা মুক্ত করতে অধিক ফসল ফলানো যেমন জরুরি, তেমনি অধিক ফসল ফলাতে অপরিমিত কীটনাশক-এর ব্যবহার স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক্ষেত্রে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনলেও তাকে টেকসই কৃষি উন্নয়ন বলা যাবে না। তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবতে গিয়ে কীটনাশকের ব্যবহার সহনশীল ও পরিমিত পর্যায়ের হতে হবে। সবার জন্য টেকসই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক অসমতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। দ্রুত নগরায়ণ প্রক্রিয়ার সাথে সাথে পরিবেশবান্ধব নগরজীবন গড়ে তুলতে হবে।

আমরা সবেমাত্র উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এর জনসংখ্যার তুলনার আয়তন সীমিত। সীমিত আয়তনে বিপুল জনসংখ্যার ভার বহন করতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এতে জীবন ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ যদি এসডিজি অর্জন করতে সক্ষম হয় তাহলে যে সুফলগুলো আসবে তা হলো-

• সকল পর্যায়ে দরিদ্রতার অবসান হলে সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমে আসবে। রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারবে।

• টেকসই কৃষি ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং আমরা কর্মঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব। ক্ষুধামুক্ত হয়ে দক্ষ ও সমর্থ জনশক্তিতে পরিণত হব। 

• গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত হলে সকলে সচেতন হবে এবং এই সচেতনতা এদেশের নাগরিকদের বহুমুখী সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে। 

• টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে জেন্ডার সমতা বিধান, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি সংকট নিরসনে নবতর উদ্ভাবন, কর্মসংস্থানের সমতা ও সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত হবে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারসাম্য আসবে।

• অবকাঠামো বিনির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সমকক্ষতা অর্জন সহজ হবে। বিশেষ করে জীব-জগতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

• কাঙ্ক্ষিত নগরায়ণ, উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা প্রভৃতি বিষয়গুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার পাবে, পাশাপাশি নাগরিকদের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করা সহজ হবে।

উপরে বর্ণিত সুফলগুলো প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়ন করছে। আর এতে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থাগুলো সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

 

কাজ-১: টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা পোস্টারে উপস্থাপন করো।

কাজ-২: এসডিজি অর্জনের মাধ্যমেই কেবল বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে'-এই শিরোনামে শ্রেণিতে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করো।

Content added || updated By
Promotion